ড. বিধান চন্দ্র রায়: এক মহান চিকিৎসক, রাষ্ট্রনায়ক ও মানবতার প্রতীক

সফিউল ইসলাম
গবেষক, ইতিহাস বিভাগ
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়

ভারতবর্ষের ইতিহাসে কিছু মানুষ এমন রয়েছেন, যাঁদের অবদান এককথায় অতুলনীয়। তাঁদের কাজ, দর্শন ও আত্মত্যাগ আজও কোটি কোটি মানুষের অনুপ্রেরণা। ড. বিধান চন্দ্র রায় এমন একজন ব্যক্তিত্ব, যিনি ছিলেন একাধারে একজন চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ এবং মানবতার মহান প্রতিনিধি।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

ড. বিধান চন্দ্র রায় জন্মগ্রহণ করেন ১ জুলাই ১৮৮২ সালে, পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার পাটনায় (বর্তমানে বিহার রাজ্যে)। তিনি ছিলেন এক গভীরভাবে ধর্মনিষ্ঠ ও শিক্ষিত ব্রাহ্ম সমাজ পরিবারে। পড়াশোনার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই প্রবল ছিল।

তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গণিত ও পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এরপর চিকিৎসাবিদ্যায় উচ্চতর পড়াশোনার জন্য ইংল্যান্ডে যান এবং বিশ্বখ্যাত MRCP ও FRCS ডিগ্রি একসঙ্গে অর্জন করেন, যা একটি বিরল সম্মান ছিল।

একজন মহান চিকিৎসক হিসেবে তাঁর ভূমিকা

ইংল্যান্ড থেকে ফিরে এসে তিনি কেবল চিকিৎসা করেননি, রোগীর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের মনে সাহস ও বিশ্বাসও জুগিয়েছেন। বহু দরিদ্র মানুষকে তিনি নিঃস্বার্থভাবে চিকিৎসা সেবা দিতেন, যা তাঁকে সাধারণ মানুষের কাছে এক ‘দেবতুল্য চিকিৎসক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

তিনি বিশ্বাস করতেন, চিকিৎসা কেবল পেশা নয়, এটি একটি পূর্ণ মানবিক কর্তব্য। তাঁর এই দর্শনই তাঁকে অনন্য করে তুলেছে।

রাজনীতির ময়দানে তাঁর অসাধারণ অবদান

ড. রায়ের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হিসেবে। তিনি মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।

স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৪৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হন এবং ১৯৬২ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত এই দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন। তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বে কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের সর্বাঙ্গীন উন্নয়ন শুরু হয়। পরিকল্পিত নগরায়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যখাতের বিস্তার এবং শিল্পায়নের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য।

উন্নয়নমূলক কাজ ও ভবিষ্যতের রূপরেখা

ড. রায়ের নেতৃত্বে তৈরি হয় কলকাতার সল্টলেক (বিধাননগর), চিত্তরঞ্জন সেবা সদন, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, সায়েন্স কলেজ সহ বহু প্রতিষ্ঠান। তিনি স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সমাজকল্যাণকে রাজনীতির মূলে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা, যাঁর পরিকল্পনা ভবিষ্যতের জন্য শক্ত ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে।

মৃত্যু ও স্মরণীয় অবদান

ড. বিধান চন্দ্র রায় ১ জুলাই ১৯৬২ সালে নিজ জন্মদিনেই মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে পর্যন্তও তিনি জনসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। তাঁর স্মরণে প্রতি বছর ১ জুলাই ‘ডক্টরস ডে’ হিসেবে পালন করা হয়, যা তাঁর প্রতি জাতির গভীর শ্রদ্ধার প্রতিফলন।

উপসংহার: কেন আজও প্রাসঙ্গিক?

আজ যখন আমরা সমাজে আদর্শ নেতা ও নিঃস্বার্থ সেবকের অভাব অনুভব করি, তখন ড. রায়ের জীবন আমাদের এক আদর্শ পথ দেখায়। তিনি আমাদের শেখান, জ্ঞান, দয়া ও নিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব।

আমাদের প্রত্যেককে তাঁর জীবনের থেকে প্রেরণা নিয়ে, নিজের কর্মক্ষেত্রে নিষ্ঠা ও মানবিকতা বজায় রেখে সমাজে এক ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।

📌 itsamarblog.blogspot.com

(This article is originally published here. Visit for more inspiring biographies.)

✅ Disclaimer:

This post is created for educational and motivational purposes.
Do not copy this post. Legal action will be taken otherwise.
Photo Credit: Wikipedia

#BidhanChandraRoy #DoctorsDay #IndianHistory #Inspiration #MedicalLegend #BengalPride #GreatIndians #IndianDoctors #MotivationalLeader #itsamarblog #IndianPoliticians #BiographyBangla #RajnitirDikpalo #Deshpremi #ManobotarProtik #SwadhinotaAndolon #BanglarGarbo #MedicalRevolution #HealthcareHero #BanglaBlog

Post a Comment

Previous Post Next Post