Safiul Islam
M.A & B.ED in History
Aliah University, Kolkata 

কলেজ জীবনের ছবি, ৯ই এপ্রিল ২০১৩!

লালবাগের সুভাষচন্দ্র বোস সেন্টেনারি কলেজের ইতিহাসে অনার্সের ছাত্র! বান্ধবী বা প্রেমিকা সম্পর্কে কৌতূহল থাকলেও অত বুঝতাম না, কোনো বান্ধবী ছিলওনা তখন। ক্লাসের হাতে গুনা কয়েকটা মেয়ে ছিল, প্রথমদিকে তাদের সাথে কথা বলাবলি না থাকলেও ফাইনাল ইয়ারে গিয়ে কয়েকজনের সাথে দু একটা কথা হয়েছিল। যতদূর মনে পড়ছে হাসিনা খাতুন আর মৌসুমী ভৌমিক বলে দুজন ছিল আমাদের ক্লাসে। বেশ পড়াশোনায় ভালো ছিল এখন কে কোথায় জানিনা। কলেজের সবথেকে ভালো বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম ছিল, দীপঙ্কর, সুজিত, অজয়, বাসিত, আসিস, নুর ইসলাম ও সামিদুল।

প্রায় সবার সাথেই এখনও টুকিটাকি কথা হয়। সবাই ঘর সংসার নিয়ে ব্যস্ত, রিসেন্টলি দীপঙ্কর মেয়ের বাবা হয়েছে। অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা দীপঙ্করের জন্য। যাইহোক, আমি প্রতিদিন কলেজ যেতাম না, ওই সপ্তাহে ৩-৪ দিন হয়ত গিয়েছি। নাজিরপুর থেকে বাসে উঠে চুনাখালিতে নেমে আবার বাসে উঠে কলেজের সামনে নামতাম। একদিন স্টুডেন্ট ভাড়া নিতে অস্বীকার করতে বাস কন্ডাক্টরের সাথে কি ঝামেলাই না করেছিলাম।

আজ হঠাৎই কলেজের কথা মনে পড়ছে, ঘুম আসছে না এখন রাত ৩:৫৮ মিনিট, ভাবলাম একটু এটা ওটা লিখি। কলেজ জীবনটা একটা অন্যরকম জীবন, সেইসময় স্কুল থেকে কলেজে আসার কিযে মজা সেটা লিখে এক্সপ্রেস করা যাবে না। তবে উর্তি বয়সে ফুর্তি মারার যে ব্যাপারটা সেটা এখানেই শুরু হয়। স্কুলে পড়ার সময় অনেক প্রোগ্রাম মিস করেছি হয়ত অনেকদিন শিক্ষক দিবসে স্কুলও যায়নি, কিন্তু কলেজে কিছু মিস করিনি। প্রথমদিন চন্দন আর গোলাপ দিয়ে বরণ করে নিয়েছিল সিনিয়ররা। সেই নবীন বরণ, সোশ্যাল, কিছু মিস করতাম না। 


এখন তো ডিজিট্যাল যুগ, স্কুল থেকেই সবার হাতেই স্মার্টফোন। আমি প্রথম মোবাইল ব্যবহার করা শুরু করি ২০১১ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবার পর থেকে। কলেজে গিয়ে মোবাইলের বায়না ধরতে আব্বাজী একটা ফোন কিনে দেয় নোকিয়া C3-00 সেই সময় নোকিয়ার এক্সপেন্সিভ ফোন গুলোর মধ্যে একটা 48টা সুইচের ওই জাভা মোবাইলে যে কত স্মৃতি জড়িয়ে আহ। আমাদের কলেজে ঢোকার একটু আগে যেখানে মুর্শিদাবাদ স্টেশনে যাবার জন্য রাস্তাটা বাক নিচ্ছে ওই কর্নারে একটা নবাবী আমলের জীর্ণ মসজিদ ছিল যেখানে অনেকদিন নামাজ পড়েছি, তখন আমি তাবলীগ জামাতের এক্টিভ সাথী। ওই মসজিদের আমিরের সাথে আমার সেই সম্পর্ক তখন, যদিও পরে মসজিদটা ভেঙে নতুন করে করা হয়েছে, পুরনো আর কিছুই নেই। তবে সেই সময় 5 ওয়াক্ত নামাজ তাও আবার জামাতের সাথে, প্রায়ই গ্রামের মসজিদে আযান দিয়েছি, নামাজও পড়িয়েছি অনেকদিন, আযান দেবার সময় বিদেশিদের কপি করার চেষ্টা করে বেশ সুর করে আযান দিতাম। যাইহোক, ঈমানী জজবা তখন তাজা একদম।

কলেজে মেয়েদের প্রতি তখন একটুও টান ফান ছিল না ভাই, ওইযে পাক্কা নামাজী তখন, পাপ হবে ওসব ভাবলে এটাই মাথায় ঘুরত। তবে একটা জিনিস বুঝে ছিলাম, একটু পড়াশোনা করলেই চারপাশে মেয়ের অভাব হয় না🤣

এখন অবশ্য সিচুয়েশন আলাদা, বাইক, দামী মোবাইল, DSLR, এসব ম্যাটার করে, তখন এসব কিছু ছিল না।


লালবাগ কলেজের আনাচে কানাচে কত স্মৃতি, টিফিন টাইমে লাইব্রেরীতে গিয়ে বই পড়তাম ম্যাক্সিমাম সময়, পাশে আমার এডুকেশন ছিল পড়তে দারুন লাগত। লাইব্রেরীতে কল্যাণ স্যারের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। যদিও পড়ার কোনো সঙ্গী ছিলনা একাই পড়তাম। ক্যান্টিন, কলেজের মাঠ, সাইকেল গ্যারেজ, কোথায় আড্ডা দিইনি? এখনও কলেজের পাশদিয়ে গেলে সেই পুরোনো স্মৃতি গুলো হাতছানি দেয়। এভাবেই একসময় কলেজ লাইফ শেষ হলো, চলে এলাম কলকাতায়। সেইযে এসেছি কলকাতায় এখনও রয়ে গেছি। অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছা করছে, জানিনা এসব আদৌ কেউ পড়বে কিনা, তাতে কি যায় আসে? রাত প্রায় শেষের দিকে এখন ঘড়িতে ভোর ৪:৩৮ পরে একদিন অন্য একটা পার্টে কলেজের বাকি গল্প লিখব। ভালো থাকবে সবাই।


বিঃ দ্রঃ- ছবিটা আমাদের কলেজের সাইকেল গ্যারেজে তোলা, মোস্ট প্রবাবলী অজয় বা দীপঙ্কর তুলে দিয়েছিল।


সফিউল ইসলাম (জুয়েল)

২৭-০৯-২০২৩

উত্তর পঞ্চান্ন গ্রাম

কলকাতা ১০০

Post a Comment

Previous Post Next Post