Picture Source: Pinterest


 ২৪/০৪/২০১৬ সেদিন ছিল রবিবার,
বাড়িতে এক সপ্তাহ  থাকার পর কলকাতা যাবার উদ্দেশ্যে বাড়িথেকে দূপুর ১টা নাগাদ বেরিয়ে গেলাম। প্রতিদিনের মত সেদিনও আব্বাজি বাইকে করে নাজিরপুরে রেখেগেল, আর সাবধানে ভালোবাভে যাবার পরামর্শ দিল,আমি ঠিক আছে বলে আব্বাজি কে বাড়ি যেতে বললাম।
একটু পরেই বাসে চাপলাম বহরমপুরে যাবার জন্য, বহরমপুর স্টেশন থেকে ট্রেন আছে বিকাল ৩টে বেজে ১০ মিনিটে, যথা সময় মত ট্রেন এলো, আমি আর রবিউল ট্রেনে চাপলাম। প্রতি রবিবারই এই সময় ভিড় থাকে কিন্তু আজ তার উল্টোটা, ট্রেন প্রায় ফাকা, ভোট চলছে সেই জন্য মনে হয় লোক জন কম। যাইহোক, আমরা বসলাম জানালার ধারে। পড়া, গানশোনা, গল্প আর বন্ধুদের সাথে চ্যাটের মধ্য দিয়ে আমাদের যাত্রা টা বেশ ভালোই যাচ্ছিল।
ক্রমেই একটার পর একটা স্টেশন পার করে ধিরে ধিরে কলকাতার দিকে এগিয়ে চলেছি ।
আমরা যে ট্রেনে আছি সেটা শিয়ালদহ যাবে না,যাবে চিৎপুর তাই আমাদের দমদমের আগে ট্রেন চেঞ্জ করতে হবে, আমরা ঠিক করলাম ব্যারাকপুরে নেমে লোকাল ট্রেন ধরে শিয়ালদহ পৌছাব। ফাকা ট্রেন.. বেশ ভালোই লাগছে যাত্রাটা। খেয়াল করে দেখলাম কল্যানি পেরিয়ে গেছি..বসেই আছি..এখনও, এবার উঠে ফ্রেস হয়ে এলাম..এসে একটু গল্প টল্প করলাম। 
একই ভাবে গল্প করতেও ভালো লাগেনা..তাই নৈহাটির পর গেটে এসে দাড়ালাম। এত সুন্দর হাওয়া লাগছে যার লোভে ভেতরে আর গেলাম না..সেখানেই দাড়িয়ে রইলাম।
একসময় ভাবলাম..একটু বসি, যেই ভাবা সেই কাজ বসে গেলাম গেটে। আমরা চেপেছি প্যাসেঞ্জার ট্রেনে কিন্তু ট্রেন যে গতিতে চলছে তাতে মনেহয় এক্সপ্রেসকেও ফেল মারবে...দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছি কলকাতার দিকে তখন ট্রেনের স্পিড আনুমানিক ৮০কি.মি ঘন্টা।
এই ট্রেনটা সব স্টেশনে দাড়ায় না.. সেটা খেয়াল না রেখেই গেটে বসে আছি দ্বিতীয় ধাপিতে পা রেখে। 
জীবনে প্রথমবার গেটের সামনে বসে আছি..দারুন লাগছে, পাশে দেখছি রবিউল ও এসে দাড়িয়েছে। 
কল্পনাও করিনি যে সামনে এক্সিডেন্ট ঘটতে চলেছে...
ব্যারাকপুরের কয়েকটা স্টেশন আগে ঘটল ঘটনাটা। ট্রেন তার নিজ গতিতে এগিয়ে চলেছে কলকাতার দিকে..আমি আপন মনে পা ঝুলিয়েই বসে আছি গেটে।
হঠাৎ সজোরে আমার বাম পাটা বেধেগেল একটা প্লাটফর্মের সাথে, ভাবলাম পা হয়ত ভেঙ্গেই গেছে সঙ্গে সঙ্গে পা তুলে হাত দিয়ে চেপে ধরলাম জানিনা ভেঙ্গেছে কিনা..
আস্তে আস্তে দেখলাম পায়ের বুড়ো আঙুল টার এক কোনে রক্ত জমে গেছে, আলহামদুলিল্লাহ কোন বড়ো দূর্ঘটনা হয়নি বেচে গেলাম। না হলে যে স্পিডে ট্রেন ছিল তাতে যদি আর একটা ধাপি নিচে আমার পাটা থাকতো তাহলে পা আর পেতাম না..স্টেশনেই পড়ে থাকতো।
পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি বিশাল ভাবে ফুলে আছে।
এত যন্ত্রনা করছে যেটা সহ্য করার মত না।
ভাবলাম আর মনেহয় ভালোভবে হাটতে পারবনা। 
জীবনে একটা বিশাল বড় দূর্ঘটনার হাত থেকে আল্লাহ বাচিয়ে দিল। সেখানেই নিয়ত করলাম ঘরে গিয়ে শুকরিয়া স্বরুপ দুই রাকাত নামাজ পড়ব।
আরও প্রতিজ্ঞা করলাম জীবনে কোনদিনও পা ঝুলিয়ে ট্রেনের গেটে বসব না।😞
(আপনারাও কেউ আমার মত পা ঝুলিয়ে বসবেন না)
রাত্রি ৯:৩০নাগাদ সায়েন্স সিটির পার্শে উত্তর পঞ্চান্নতে আমার মেসে এসে পৌছালাম
এসে ফ্রেস হয়ে একটু রেস্টের পর ডিনার করলাম, তারপর নিচেথেকে পেন কিলার নিয়ে এসেছিলাম সেটা খেয়ে এশার নামাজটা পড়লাম শেষে দুরাকাত শুকরিয়ার নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে গেলাম..
৫-৬ দিন পরে পাটা পুরো পুরি সেরে ওঠে। 

Post a Comment

Previous Post Next Post