আজ রবিবার মার্চ মাসের ২৬ তারিখ। রমজান মাস চলছে আজ তিনটে রোজ সম্পূর্ন হলো। প্রতিদিনের মত আজও সেহরি করে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বাড়িতে থাকলে সাধারণত আমার ফোন ভাইব্রেশন করা থাকে। সকাল ৭টা নাগাদ মা অনেকবার ফোন করেছে নিচে থেকে। ফোনের সাড়া না পেয়ে কষ্ট করে আমার মা উপরে উঠে এসেছে পেটে হাত দিয়ে কাদতে কাদতে আমাকে ডাকলো ওষুধ নিয়ে আসতে বললো পেটের যন্ত্রণার। আমার কাঁচা ঘুম ভাঙলে একটা বাজে অভ্যাস আছে সেটা হলো আমি আঁতকে উঠে জোরে কেঁদে ফেলি বা ধমক দিই। আজ মা কাদঁছে সেই সময় আমিও অনেক জোরে জোরে কেঁদে ফেলেছিলাম অবচেতন হয়ে। মাও হয়ত চমকে উঠেছিল। একটু পরেই হুস ফিরতেই আমি নেমে গিয়ে ইসলামপুরের অ্যাপোলো ফার্মেসি থেকে ড্রোটিন আর প্যান ডি নিয়ে এসে মাকে খাইয়ে দিলাম। দেখলাম মেজো মামী এসে মার কাছে বসে আছে। তখন প্রায় সকল ৭:৩০। কিন্তু সেই ঔষধে কাজ করলো না। আমার ভগ্নিপতি আসিরকে ফোন করে ডাকলাম কিছুক্ষণের মধ্যে বোন ভাগ্নি সহ ওরা এসে পৌঁছাল। আশির কয়েকটা ঔষধ খাওয়ালো তাতেও কোনো কাজ হলো না। নর্মালী ওই ঔষধ খেলে ব্যথা কমে যাবার কথা। মুরগির গলা কেটে ছেড়ে দিলে যেমন ছটফট করে তেমন ভাবে মা ছটফট করছিল, মাতো কষ্ট পাচ্ছেই সাথে আমরা সবাই। আমি মার এই কষ্ট নিতে পারছিলাম না। পরে রকিকে ডেকে ওদের গাড়িতে নিয়ে গেলাম ডোমকল হাসপাতালে ইমারজেন্সিতে কিছু ঔষধ ইনজেকশন দিয়ে অবজারভেশনে রাখল কিন্তু তাতেও কোন লাভ হলো না। বের করে নিয়ে এলাম ইউ এস জি করাব বলে। রবীন্দ্র ডাইগনাস্টিক সেন্টারের সামনে অনেক্ষণ দাড়িয়ে ৯:১৫ থেকে ১০:২০ পর্যন্ত। কিন্তু ডাক্তার আসতে দেরি করছে আর অন্যদিকে মা একই ভাবে কষ্ট পাচ্ছে। দেখতে না পেরে আমি জোর করে বহরমপুর নিয়ে যাবার কথা বললাম। সেই মত বহরমপুর নিয়ে গেলাম সরাসরি হাসপাতালে না গিয়ে গেলাম বহরমপুর সিটি নার্সিং হোমে সেখানে ডক্টর আবুল কালাম আজাদ গাইনি সার্জেন উনি ইমারজেন্সি দেখে ভর্তি করার কথা বললেন। আমরা USG টা করাতে বললাম তখনও মা একইভাবে কষ্ট পাচ্ছে। ভর্তি করিয়ে দিলাম তখন প্রায় বেলা ১২টা তার কিছুক্ষন পরে ট্রিটমেন্ট শুরু হলো স্যালাইন সাথে একটা ইনজেকশন দিল। প্রায় ১:৩০ এর পর মার পেটের ব্যাথা একটু কমলো, মা তখন ঘুমিয়ে গেল সারাদিন বমি আর পেটের যন্ত্রণায় মা একেবারে বিছানাগত হয়ে গেছে। USG রিপোর্ট পেলাম ২টো নাগাদ দেখলাম অ্যাকিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস এবং ইউরিন ব্লাডারে ইনফেকশন। ডাক্তারে বললো অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশন করতেই হবে নাহলে যেকোনো মুহূর্তে বড়ো কিছু সমস্যা হতে পারে। ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ অন্য একজন জেনারেল সার্জনকে রেফার করলো উনার নাম ডক্টর G M SADIK, বিকেলে উনি এলেন কথা বললাম আগামী কাল সোমবার ২৭-০৩-২০২৩ সকালে মার অপারেশন হবে। বিকেল ৩:৩০ নাগাদ মার কাছে গেলাম উপরে, কথা বলে এলাম তখন যন্ত্রণা একে বারেই নেই বললো। সাহস দিয়ে এলাম অপারেশনটা করতেই হবে মাইক্রো সার্জারি হবে ভয়ের কোনো কারণ নেই ইনশাআল্লাহ তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে। মার সাথে কথা বলার সময় আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। কোনো মতে কান্না চেপে কথা বলছিলাম এতটাই মায়া লাগছিল আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। মা টাকা পয়সার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলো কত কি খরচ হচ্ছে আমি ওসব নিয়ে চিন্তা করতে বারন করে আরো কিছুক্ষন থেকে নেমে এলাম নিচে। আব্বাজি বোন আশির ছোটমামা সবাই বসে নিচে তখন রকি আর মেজমামি বাড়ি গেল। আমি স্বাস্থসাথী কার্ড সহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট নিতে বাড়ি এলাম এসে স্নানে ঢুকলাম তখন প্রায় সন্ধ্যা ৬টা। ইফতারের টাইম পার হয়ে গেল। পারভীন বুবু ইফতারের খাবার দিয়ে গেল। খেলাম। পরে আব্বাজি ফোন করলো আজ আর আসিস না কার্ড এন্ট্রি হবে না আজ। কাল সকালে আয় সবকিছু নিয়ে। আমি রেডি হয়েই ছিলাম যাব বলে। গেলাম না, সকালে যাব। আজ বাড়িতে আমি একা। আমার ইদানিং হার্ট অনেক দূর্বল হয়ে গেছে একটুতেই চমকে উঠছি ভয় ভয় লাগছে। যাইহোক আল্লাহ যেন আমার মাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দেন সেটাই প্রার্থনা।
২৬-০৩-২০২৩
২১:৩৮
Shripatipur

Post a Comment

Previous Post Next Post